ফাল্গুনের এই সময়ে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। আর এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শারীরিক অস্বস্তি। গরমে ভালো থাকা কি মুখের কথা! প্রকৃতপক্ষে আপনার প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় কোনো রদবদল হয় না। সকালে ক্লাস কিংবা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া থেকে শুরু করে বিকেলে বাসায় ফিরে পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানো, কিছুই বাদ যায় না নিত্যকার রুটিন থেকে। অথচ সবকিছুতেই বিঘ্ন ঘটায় এই অসহনীয় গরম। এরমধ্যেই কখনও যদি কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সেজেগুজে বের হতে হয়, তবে কিছুক্ষণ বাদেই তার দফারফা। এ ছাড়া গরমের নানা রকম অসুখ-বিসুখ তো আছেই। কিন্তু অসহ্য গরম বলে কি জীবন থামিয়ে রাখা যাবে। কখনও না। এরজন্য প্রয়োজন গরমকে সঠিকভাবে মোকাবেলার কৌশল জানা। তাই এ সময় বাড়তি যত্ন নিন চুল ও ত্বকের। ভারী মেকআপ না হয় নাইবা করলেন। আসলে এ সময়ে তো আপনার চেষ্টা করতে হবে স্বস্তিতে থাকার। আর বেশি মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে ঠাণ্ডা শরবত বা ফল খান। এই গরমে মাথায় রাখুন কিছু বিশেষ টিপস। তাহলেই গরম আর আপনাকে কাবু করতে পারবে না।
গরমে যা খাবেন
গরম পড়তে শুরু করা মানেই যে আপনার প্রতিদিনের লাইফস্টাইল একেবারে বদলে ফেলতে হবে এমন কিন্তু নয়। শুধু খাওয়াদাওয়ার দিকে একটু নজর দিন।
- এই সময় দিনে অন্তত ২ লিটার পানি পান করবেন। চিনি লেবুর শরবত, ডাবের পানি, দইয়ের ঘোল খেতে পারলে ভালো হয়।
- বাইরে বের হলে গ্লুকোজ পানি বা স্বাভাবিক পানি সঙ্গে রাখবেন। অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরের পানির প্রয়োজন হয়।
- তরমুজ, শসা, পেঁপেসহ গ্রীষ্মের অন্যান্য ফল প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- সারাদিন ফ্রেশ ও ফিট থাকতে হলে সকালে অবশ্যই নাস্তা করে বের হবেন।
- গরমের সময় বেশি মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় টমেটো রাখুন। টমেটো শরীর ঠাণ্ডা রাখে।
- গরমের সময় রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলতে পারলে ভালো।
- টক দই গরমের সময় দারুণ উপকারী। তাই পারলে দিনে একবার টক দই খান।
পেটের সমস্যা প্রতিরোধ করতে খাওয়া-দাওয়া
- গরমের সময় ডায়রিয়া, বদহজমের সমস্যা প্রায়ই লেগে থাকে। এগুলো হাত থেকে রেহাই পেতে হলে ফোটানো পানি পান করতে হবে। আর রান্না কাজে পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে।
- ফল খাওয়ার আগে লবণ পানি দিলে ভালো করে ধুয়ে নিন। বেশিক্ষণ ফল কেটে ফেলে রাখবেন না। গোটা ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- বাইরে কম খাওয়াদাওয়া করুন। রেস্টুরেন্ট বরফ দেওয়া পানি কম খাবেন।
- গরমে অতিরিক্ত কোল্ড ড্রিংক না খাওয়াই ভালো।
- রাতে অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণেও পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
গরমের অসুখ বিসুখ
গরমের অসুখ সম্পর্কে সচেতন থাকা সুস্থ থাকার একটা জরুরি শর্ত।
হিট স্ট্রোক :অনেকক্ষণ রোদ বা গরমে থাকলে শরীরের টেম্পারের রেগুলেশন নষ্ট হয়ে হাই টেম্পারেচার উঠে যায়। সেই সঙ্গে বমি, মাথায় যন্ত্রণা ইত্যাদি উপসর্গ থাকে। খুব বেশি টেম্পারেচার হলে প্রথমেই ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করা উচিত। এরপর ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ভাইরাস জ্বর :এর উপসর্গ হলো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর মাথা ব্যথা, গাঁটে প্রচণ্ড ব্যথা, বমিভাব ইত্যাদি। এ ধরনের অসুখে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ত্বকের সমস্যা :গ্রীষ্মে ত্বকের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো রোদ, ঘাম, ধুলোময়লা। তাই এসব থেকে আপনাকে সাবধান হতে হবে।
- অতিরিক্ত রোদে ত্বক পুড়ে কালো হয়ে যেতে পারে। একে সানবার্ন বলে।
- অনেক সময় প্রসাধনীর রাসায়নিক পদার্থ রোদের সংস্পর্শে এলে চামড়ায় অ্যালার্জি হতে পারে।
- মেচতা থাকলে রোদে তা বেড়ে যায়।
- এই সময় কেউ কেউ হাত-পা বগলে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় সমস্যায় ভোগেন। ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে নিয়মিত গোসল করুন।
গরমে ফিট থাকতে
গরমকালে ব্যায়াম করলে যেহেতু বেশি ঘাম হয়, তাই ব্যায়মটা বাদ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শরীর তরতাজা রাখতে ফিটনেস খুবই জরুরি। আপনাদের জন্য গরমের কয়েকটা সহজ এক্সারসাইজ—
- দু পা একটু ফাঁক করে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতে নিতে দু-হাত শরীরের দু-পাশ দিয়ে টান টান করে মাথার উপরে তুলুন। এবার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে গোড়ালি নামান।
- দু'হাত শরীরের দু'পাশে রেকে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। দু'পা তুলে সাইকেল চালানোর ভঙ্গিতে ক্রমান্বয়ে দুটো হাঁটু বুকের কাছে আনার চেষ্টা করুন। ১০ বার অভ্যাস করুন, পরে জোড়া পায়ে এই এক্সারসাইজ করুন।
গরমে রূপচর্চা
ঘামে ভিজে মাথায় গন্ধ বা দিনের শেষে চটচটে চুল নিয়ে একটা ঝামেলা লেগেই থাকে। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ভালো শ্যাম্পু দিয়ে অবশ্যই চুল ধুয়ে নিবেন। মাসে দু'বার চুলের ধরন অনুযায়ী কন্ডিশনিং করবেন। স্কিন ট্যান দূর করতে কমলালেবুর খোসাবাটা ও শসার রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগান। ত্বক পরিষ্কার রাখুন, তাতেই শতকরা ৮০ ভাগ সমস্যা মিটে যাবে। ত্বক পরিষ্কার রেখে নিয়মিত স্কেনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চরাইজিং করা এবং ত্বক অনুযায়ী প্যাক লাগাবেন।
এ ছাড়া ইয়োগা বা মেডিটেশন করুন প্রতিদিন। দিনভর তরতাজা, ফ্রেশ থাকার জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ, শরীরর চর্চার পাশাপাশি রূপচর্চার দিকেও খেয়াল রাখুন। তা হলে গরমেও সুস্থ, সুন্দর থাকার আমেজ আপনার চেহারাকে দেবে নজর কাড়া বাড়তি সৌন্দর্য।
গরমে সুঅভ্যাস
- ভোরে ঘুম থেকে উঠে মর্নিং ওয়াক। তারপর সাঁতার।
- এক্সারসাইজ করার সময় গলা ভেজার মতো পানি পান করা যেতে পারে।
- যাদের ঘাম বেশি হয়, তারা সবসময় ঘাম মুছে ফেলবেন।
- এসি রুমে ঢোকা বা বেরুনোর সময় ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করুন। যাতে শরীরের সঙ্গে তাপমাত্রার ব্যালেন্স হয়।
- ঘামে ভেজা অবস্থায় এসিতে থাকা মারাত্মক ক্ষতিকর।
- স্পাইসি বা ফ্রায়েড খাবার এড়িয়ে চলুন।
ব্যাগে যা রাখবেন
- সানগ্লাস ও ছাতা অবশ্যই রাখবেন।
- বিশুদ্ধ পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
- লাঞ্চের জন্য বাসার তৈরি খাবার নিন।
- টাওয়েল এবং ওয়েট টিস্যু রাখা জরুরি।
- সানস্ক্রিন লোশন এবং ডিওডোর্যান্ট সঙ্গে রাখুন।
একটি নমুনা ডায়েট
ভোরে উঠে লিকার চা আর ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কুট। সকালের নাস্তায় রুটি, সবজি ও ফলের রস। দুপুরে ভাত, ডাল, সবজি, হালকা মাছের ঝোল ও টক দই। বিকেলে পছন্দসই হালকা নাস্তা। রাতে ভাত বা রুটি সাথে চিকেন।
No comments:
Post a Comment